ডলার সংকট ও রিয়ালে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে এবারের হজে। গত বছরের তুলনায় এবার ব্যয়ও বাড়বে হজযাত্রায়। যদি অন্য কোনও ধরনের খরচ না-ও বাড়ে, শুধু মুদ্রা বিনিময়ে হারের তারতম্যে গত বছরের ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকার সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য বেড়ে সাড়ে ৬ লাখ ছাড়াতে পারে।
অন্যদিকে বিমান ভাড়া, সৌদি আরবে হোটেল ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাড়লে হজ প্যাকেজে ৭ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। হজ-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৪৪৪ হিজরির ৯ জিলহজ অর্থাৎ ২৮ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ-সৌদি আরব হজ চুক্তি ৯ জানুয়ারি হয়েছে। হজ চুক্তি শেষে দেশে ফিরে ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে হজের ব্যয় বাড়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও অবস্থাতেই আমরা হজের খরচ বাড়াতে চাই না। যে ব্যয় গত বছরে হয়েছিল, সেটাই রাখার চিন্তা করছি। তারপরও কিন্তু খরচ বাড়বে। কেন বাড়বে সেটা বলি, সৌদি রিয়ালের দাম গত বছর ছিল ২১ থেকে ২২ টাকা, আর এখন প্রতি রিয়ালের দাম বাংলাদেশি ৩০ টাকা। আমরা দাম বাড়ানো ছাড়াই এমনিতেই ব্যয় বেড়ে গেল এই কারণে। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো যে করেই হোক ব্যয় কম রাখার জন্য।’
হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, সৌদি আরবে মক্কা-মদিনায় পুরনো হোটেলের সংস্কারকাজ চলছে। ফলে সৌদি আরবে হজের সময় আবাসন-সংকট দেখা দিতে পারে। বাড়তে পারে আবাসন ব্যয়ও।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আমরা কখনও চাই না হজের খরচ বাড়ুক। কিন্তু নানা প্রেক্ষাপটে খরচ বাড়তে পারে। সৌদি আরবে আবাসন খরচ বাড়লে হজ প্যাকেজের ব্যয় বেড়ে যাবে।’
হজ চুক্তি অনুযায়ী করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে এ বছর বাংলাদেশের কোটার পূর্ণ সংখ্যক হজযাত্রী হজে গমন করতে পারবেন। এ বছর সর্বমোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশ থেকে হজে গমন করবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করবেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৫০ শতাংশ ও সৌদি এয়ারলাইনস ও ফ্লাই নাস বাকি ৫০ শতাংশ হজযাত্রী পরিবহন করবে।
গেল বছর হজ পালনের জন্য বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যান ৫৬ হাজার ৯৫২ জন। সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১-এর খরচ হয়েছিল জনপ্রতি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা এবং প্যাকেজ-২-এ খরচ হয় জনপ্রতি ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
এবার হজের ব্যয় ৭ লাখ ছাড়াবে বলে শঙ্কা হজ এজেন্সি মালিকদের। মুদ্রার বিনিময় হার তারতম্য ছাড়াও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের হজ ফ্লাইটের ভাড়া বাড়িয়ে প্রস্তাব করছে। এ বছর এক বৈঠকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া প্রস্তাব করে রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনস। যদিও বৈঠকে ধর্ম মন্ত্রণালয় আপত্তি জানিয়ে পুনঃভাড়া প্রস্তাব করতে বলে বিমানকে।
সূত্র জানায়, বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে হজ প্যাকেজ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ভাড়া প্রস্তাব করবে সভায়। তবে কোনও অবস্থাতেই ১ লাখ ৯৫ হাজারের নিচে ভাড়া নির্ধারণ করবে না বিমান। গত বছর বিমান ভাড়া ছিল ১লাখ ৪০ হাজার। ফলে বিমান ভাড়া ভাড়ছে ৫৫ হাজার টাকা।
এ কারণে বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ভাড়া নির্ধারণে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের প্রস্তাব হজ এজেন্সি মালিকদের। হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সারা বছরের লোকসানের ধকল কাটিয়ে উঠে হজযাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা দিয়ে। হজ ফ্লাইট থেকে বিমান ৮০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা করে। বিমানের আয়ের ১৫ শতাংশ হয় হজ ফ্লাইট থেকে। বিমান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা মুনাফা রেখে ভাড়া প্রস্তাব করলে হজযাত্রীদের ওপর আর্থিক চাপ কমবে।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হাব বরাবরই হজযাত্রীদের খরচের বোঝা কমাতে তৎপর ছিল। এভিয়েশন খাতের বিষয়ে যারা বোঝেন, তাদের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করতে পারে সরকার। এই কমিটি সব ধরনের খরচ, সবকিছু বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করবে।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিমান এবার নিজস্ব উড়োজাহাজের মাধ্যমে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। কোনও উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হবে না। সবকিছু বিবেচনা করে বিমান-সংশ্লিষ্টরা ভাড়া নির্ধারণ করবে। আমি আশাবাদী ভাড়া রিজনেবল হবে। হজ ফ্লাইট নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
পাঠকের মতামত